নখের উপর নকশা

নেল আর্ট এখন আর কারো কাছে অজানা নয়। আমি তো একে বলি নখের উপর মন পছন্দ আঁকিবুকি।  সে যে কোন আকার বা আকৃতির নখই হোক না কেন তার উপর ফুল,প্রজাপতি, কিংবা জেব্রা ক্রসিং, দাবার ছক যাই আঁকুন না কেন তাই নেল আর্ট। ফ্যাশন জগতের এই নতুন সংযোজন নেল আর্ট। স্কুলের তনয়া থেকে শুরু করে ফ্যাশন বা স্টাইলপ্রেমী মহিলাদের লেটেস্ট ফ্যাশন।

এখনও অনেকে নেল আর্ট আসলে ঠিক কী প্রশ্ন করে থাকেন।


আর কিছুই নয়, নখের উপর নানা রঙের নেল পলিশ বা জেল দিয়ে আঁকিবুকি। নখের উপর ন্যাচারাল রঙের জেল দিয়ে স্মার্ট লুক কিংবা বিভিন্ন গর্জাস রং দিয়ে নখ রাঙিয়ে তার উপর সুন্দর কারুকার্য। যার ফলে নখে এখন আর শুধু এক রং নয়, মাল্টিকালারের ডিজাইন।

প্রফেশনাল নেল আর্ট 

এর জন্য পার্লারে গিয়ে নেল আর্ট করাতে হবে। এখন তো প্রায় প্রতিটি শহরেই নেল আর্ট পার্লার রয়েছে। এই পার্লারগুলিতে সাধারণত প্রফেশনাল আর্টিস্টরাই নেল আর্ট করে থাকেন।সেখানে নানা পদ্ধতিতে হাতের নখগুলিকে সুন্দর করে রং দিয়ে সাজিয়ে তুলেন নেল আর্টিস্ট।এর জন্য বিভিন্ন আকারের তুলির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নেল আর্ট নেল পলিশের মতো করে লাগানো হলেও এটি কিন্তু বাড়িতে বসে করা যায় না। বিভিন্ন স্তর রয়েছে এই নেল আর্টের। রয়েছে সেটি শুকনো করার বিশেষ পদ্ধতিও। ফলে স্পা কিংবা পার্লার ছাড়া এই নেল আর্ট কিন্তু করা সম্ভব নয়।


নিজে করুন নেল আর্ট

পার্লার ছাড়া এই নেল আর্ট হয় না একথা কিন্তু একদম ঠিক না। প্রফেশনাল ভাবে হবে না ঠিকই কিন্তু ট্রাই করতে তো কোন অসুবিধা নেই? তাছাড়া আর্ট করাটা তো সম্পূর্ন মনের ব্যাপার। আপনি যে ভাবে নখে নেল পলিস লাগাতে ভালোবাসেন সে ভাবেই একটা যে কোন রং লাগান। তার পর অন্য আরেকটা রং দিয়ে ছোট ছোট ফুল বা অন্য কোন নক্সা বানাতে পারেন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন মাল্টি কালার ব্যবহারের সময় একটা রং শুকিয়ে যাবার পর যেন অন্য আরেকটি রং ব্যবহার করা হয়। আমি নিজেই বাড়িতে নেল আর্ট করি। এর জন্য আমি খুব সরু তুলি আর টুথ পিক, বা দেশলাই কাঠি ব্যবহার করে থাকি। ছোট ছোট ডটস দেওয়ার জন্য  টুথ পিক, বা দেশলাই কাঠি ব্যবহার করা হয়। তাও যদি হাতের কাছে না থাকে তাহলে চুলের বোবি পিন যাকে আমরা সহজ ভাষায় বলি ক্লিপ তারও ব্যবহার চলবে।
এখন তো বাজারে নেল আর্টের জন্য নানা ধরনের স্টোন, চুমকি, ছোট ছোট ফুলও কিনতে পাওয়া যায়। তা দিয়েও আপনি বাড়িতেই নখকে আকর্ষনীয় করে তুলতে পারেন।

নেল আর্ট টুলস 

নেল আর্টের জন্য আজকাল বিভিন্ন ধরনের টুলস রয়েছে। এক এক টুলসের এক এক কাজ। তবে নখে বিভিন্ন রং দিয়ে শেড দেওয়ার জন্য খুব বেশি ব্যবহার হয় স্পঞ্জ। কি ভাবে স্পঞ্জ দিয়ে শেড দেওয়া যায় তা আমি অন্য আরেক পোস্টে বলবো। আজ নেল আর্টের কি কি টুলস ব্যবহার হয় তা জেনে নেই।


স্থায়ী এবং অস্থায়ী নেল আর্ট

এই নেল আর্ট স্থায়ী এবং অস্থায়ী ভাবেও করা যায়। মূলত স্থায়ী নেল আর্টই করতে গেলে জেল দিয়েই করতে হয় যা কুড়ি থেকে পঁচিশ দিন স্থায়ী থাকে। নখের উপর জেল দিয়ে নেল পলিশের মতো লাগানোর পরে আলট্রা ভায়োলেট ল্যাম্পের তলায় আঙুলের নখ রেখে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এর নানা রকম স্তর রয়েছে। এমনকী রঙিন জেলগুলিও ইউভি প্রটেক্টেড। অস্থায়ী নেল আর্টে কোন রকমের জেল  ব্যবহার করা হয় না। সাধারন নেল পলিস দিয়ে নেল আর্ট করা হয়। নখ যত্ন করে রাখলে সপ্তা খানেক তো থাকেই।

ছোট নখে নেল আর্ট

যাঁদের নখ অল্পেই ভেঙে যায়, চিন্তা নেই তাঁদেরও। অ্যাক্রিলিক পাউডার দিয়ে নেইল এক্সটেনশন করিয়ে নিতে পারেন। ম্যানিকিয়োর-এর পর নখে ছোট বোর্ড লাগিয়ে ওপরে অ্যাক্রিলিক পাউডার মিক্স করা প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। আপনার নখ তৈরি হবে। এ বার তার ওপর নেইল আর্ট। যত্ন করতে পারলে এক মাস থাকবে। অথবা লাগাতে পারেন নকল নখ। বিশেষ ধরনের গ্লু দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। তাছাড়া বাজারে নকসা করা নকল নখেও পাওয়া যায়।তাছাড়া বাজারে এখন বিশেষ ধরনের অ্যাক্রিলিক নেলপলিশও এসেছে। আমি বলি কি এতো কিছু ভাববার কি দরকার। ছোট নখেও তো কত সুন্দর সুন্দর নক্সা করা যায়।
নেল আর্টের রকমসকম

প্রতিদিন যাঁরা অফিস যাতায়াত করেন, তাঁদের কাছে সব থেকে বেশি আকর্ষণীয় ফ্রেঞ্চ নেল। এটি আর কিছুই নয়, সাদা কিংবা নখের রঙেই জেলের পরপর স্তর দিয়ে তৈরি করা নখ। এক্ষেত্রে নখের তিন রকমের আকার করতে পারেন। কেউ করেন স্কোয়্যার কাট, কেউ রাউন্ড কিংবা পয়েন্টেড। আবার যাঁরা একটু গর্জাস কিছু চান,  তাঁরা ফ্রেঞ্চ নেল উইথ গ্লিটারস্, ফ্লোরাল, কিংবা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর গায়ের ছাপ দিয়ে নখকে রাঙিয়ে তুলতে পারেন। আছে ব্রাইডাল নেল আর্টও।চৌকো, গোল, ডিম্বাকৃতিনখের আকৃতি যাই হোক না কেন, তা শেপ করে তার পর নখের নকশা। যাঁদের নখ ভাল তাদের শেপ করে নিয়ে অ্যাক্রিলিক কালারের নেলপলিশ দিয়ে নকশা এঁকে দেওয়া হয়।

নেল আর্ট টিপস

১. নেল আর্টের জন্য হাতের ম্যানিকিয়োর অবশ্যই করাতে হবে।পায়ের নখে যদি নেল আর্ট করাতে হয় তা হলে পায়ের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে বা পার্লারে গিয়েও পেডিকিয়োর করানো যেতে পারে। 
                                   
২. ম্যানিকিয়োর বা পেডিকিয়োরের পরে নখের শেপ করিয়ে নিতে হবে।

৩. নেল আর্টের পর নখের ওপর যেন কোনও চাপ না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৪.রিমুভার বা স্পিরিট বা এই জাতীয় কেমিক্যাল লাগাবেন না বা ধরবেন না।

৫. খাবার খাওয়ার সময় চামচ ব্যবহার করুন। হলুদ মেশানো তরকারি খেলে নখে রং ধরে যাবে।

৬. জল কম ঘাঁটবেন। তাছাড়া নখ ভাঙতে পারে এমন কিছু করা যাবে না। 
আশা করি  এখন থেকে টিন এজার থেকে শুরু করে মধ্যবয়সি সকল তন্বীরাই এক বাক্যে মেতে উঠবেন এই নতুন ট্রেন্ডে। Enjoy করুন এই নতুন ট্রেন্ড !

                           লেখাটি ভালো লাগলে লাইক করুন, শেয়ার করুন।